Monday 17 July 2017

ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন....
ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন

ডেঙ্গু জ্বরের উৎপত্তি ডেঙ্গু ভাইরাসের মাধ্যমে এবং এই ভাইরাসবাহিত এডিস ইজিপ্টাই নামক মশার কামড়ে হয়ে থাকে।ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড়ালে সেই ব্যক্তি চার থেকে ছয়দিনের মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়।

Health Tips

Fojla Rahman Zia

ডেঙ্গু প্রধানত দুই ধরনের হয়।

ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু ফিভার।>হেমোরেজিক ফিভার।

কখন ও কাদের বেশি হয়ঃ

মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত, বিশেষ করে গরম এবং বর্ষার সময়ে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি থাকে। শীতকালে সাধারণত এই জ্বর হয় না বললেই চলে।সাধারণত শহর অঞ্চলে, অভিজাত এলাকায়, বড় বড় দালান কোঠায় এই প্রাদুর্ভাব বেশি। ডেঙ্গু ভাইরাস চার ধরনের হয়। তাই ডেঙ্গু জ্বরও চারবার হতে পারে। তবে যারা আগেও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে রোগটি হলে সেটি মারাত্মক হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

লক্ষণঃ

ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরেঃ

সাধারণত তীব্র জ্বর ও সেই সঙ্গে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।>জ্বর ১০৫ ফারেনহাইট পর্যন্ত হয়।>শরীরে বিশেষ করে হাড়, কোমর, পিঠসহ অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়।>এ ছাড়া মাথাব্যথা ও চোখের পেছনে ব্যথা হয়।>বর হওয়ার চার বা পাঁচদিনের সময় সারা শরীরজুড়ে লালচে দানা দেখা যায়। যাকে বলা হয় স্কিন র্যাশ, অনেকটা অ্যালার্জি বা ঘামাচির মতো।>বমি বমি ভাব এমনকি বমি হতে পারে।>রোগী অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ করে,>রুচি কমে যায়।

ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরঃ

এই অবস্থায় ক্লাসিকাল ডেঙ্গু জ্বরের মত নিচের লক্ষণগুলোও দেখা যায়ঃ >শরীরে বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ত পড়া শুরু হয়। যেমন : চামড়ার নিচে, নাক ও মুখ দিয়ে, মাড়ি ও দাঁত থেকে, কফের সাথে, রক্ত বমি, পায়খানার সঙ্গে তাজা রক্ত।>অনেক সময় লিভার আক্রান্ত হয়ে রোগীর জন্ডিস, কিডনিতে আক্রান্ত হয়ে রেনাল ফেইলিউর ইত্যাদি জটিলতা দেখা দিতে পারে।>ডেঙ্গু শক সিনড্রোমঃ>েঙ্গু জ্বরের ভয়াবহ রূপ হলো ডেঙ্গু শক সিনড্রোম।এর লক্ষণ হলোঃ>রক্তচাপ হঠাৎ কমে যাওয়া। >নাড়ির স্পন্দন অত্যন্ত ক্ষীণ ও দ্রুত হওয়া। >শরীরের হাত-পা ও অন্যান্য অংশ ঠান্ডা হয়ে যায়। >প্রস্রাব কমে যায়| >হঠাৎ করে রোগী জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে।

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেনঃ

শরীরের যেকোনো অংশে রক্তপাত হলে।

প্লাটিলেটের মাত্রা কমে গেলে।

শ্বাস কষ্ট হলে বা পেট ফুলে পানি আসলে।

প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেলে।

জন্ডিস দেখা দিলে।

অতিরিক্ত ক্লান্তি বা দুর্বলতা দেখা দিলে।

প্রচণ্ড পেটে ব্যথা বা বমি হলে।

কী পরীক্ষা করা উচিতঃ

জ্বরের চার থেকে পাঁচদিন পরে সিবিসি এবং প্লাটিলেট করাই যথেষ্ট।প্লাটিলেট কাউন্ট এক লাখের কম হলে ডেঙ্গু ভাইরাসের কথা মাথায় রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।ডেঙ্গু অ্যান্টিবডির পরীক্ষা পাঁচ থেকে ছয়দিনের পর করা যেতে পারে।ব্লাড সুগার, লিভারের পরীক্ষাগুলো যেমন এসজিপিটি, এসজিওটি, এলকালাইন ফসফাটেজ ইত্যাদি করা যাবে।

চিকিৎসাঃ

সম্পূর্ণ ভালো না হওয়া পর্যন্ত বিশ্রামে থাকতে হবে।

যথেষ্ট পরিমাণে পানি, শরবত, ডাবের পানি ও অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে।

খেতে না পারলে দরকার হলে শিরাপথে স্যালাইন দেওয়া যেতে পারে।

জ্বর কমানোর জন্য শুধুমাত্র প্যারাসিটামল-জাতীয় ব্যথার ওষুধই যথেষ্ট।

জ্বর কমানোর জন্য ভেজা কাপড় দিয়ে গা মোছাতে হবে।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

প্রতিরোধঃ

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধের মূল মন্ত্রই হলো এডিস মশার বিস্তার রোধ।

আশপাশের ঝোঁপঝাড়, জঙ্গল, জলাশয় ইত্যাদি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

যেহেতু এডিস মশা মূলত এমন বস্তুর মধ্যে ডিম পাড়ে, যেখানে স্বচ্ছ পানি জমে থাকে। তাই ফুলদানি, অব্যবহৃত কৌটা, ডাবের খোলা, পরিত্যক্ত টায়ার ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে।

ঘরের বাথরুমে বা কোথাও জমানো পানি পাঁচদিনের বেশি যেন না থাকে। অ্যাকুয়ারিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ারকন্ডিশনারের নিচেও যেন পানি জমে না থাকে।

এডিস মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় কামড়ায়। তবে অন্য কোনো সময়ও কামড়াতে পারে।ঘরের দরজা-জানালায় নেট লাগাতে হবে।

দিনের বেলায় মশারি টাঙ্গিয়ে অথবা কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমাতে হবে।

বাচ্চাদের যারা স্কুলে যায়, তাদের হাফ প্যান্ট না পরিয়ে ফুল প্যান্ট পরিয়ে স্কুলে পাঠাতে হবে।

মশা নিধনের স্প্রে, কয়েল, ম্যাট ব্যবহার করতে হবে।

ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে অবশ্যই সব সময় মশারির মধ্যে রাখতে হবে, যাতে করে কোনো মশা কামড়াতে না পারে।

© SQUARE DOC
Share:

0 comments: